সুমন মাহমুদ শেখ,-
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতাসহ হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন হাওরে অবাধে শামুক ধরা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। এদিকে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শামুক নিধন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান উল্লেখ না থাকায় মৎস্য অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। মোহনগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে শামুক নিধন ও বিক্রি চলছে দেদারসে। হাঁস ও মৎস্য খামারের জন্য হাওরের শামুকের কদর থাকায় সেভাবে বিক্রিও হচ্ছে। বর্ষার শুরু থেকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ডিঙ্গাপোতা হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ‘ভাসান পানির’ মৌসুম থাকায় হাওর এলাকা অনেকটা সুনসান। মাছ ধরার জন্য নির্ধারিত জলমহালগুলোতে মৎস্যজীবীদের একটি অংশ শামুক ধরছে। তবে শামুক ধরা বন্ধ আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না। বন্য প্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ধারা ৬ ও ৩৪-এ বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়া বন্য প্রাণি শিকার, ওঠানো, উপড়ানো ও ধ্বংস বা সংগ্রহ করা যাবে না। এ ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানি-রপ্তানি করা যাবে না। এ নিয়ম না মানলে এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। উপজেলার হাওরগুলো থেকে শামুক সংগ্রহ করে সেগুলো বস্তাবন্দি অবস্থায় নৌকায় করে সড়কসহ নৌকাঘাটে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে অটো রিকশা দিয়ে শামুক গন্তব্যে নেওয়া হয়। এ সময় তেতুলিয়া নৌকা ঘাটে ২০ থেকে ৩০টি বস্তা দেখা যায়। প্রতিটি বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ কেজির মতো শামুক রয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলার ৩ নং তেতুলিয়া ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে যাওয়া আসার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে, সেখান থেকে এভাবে শামুক নেওয়া হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, হাঁস এবং পাংগাস ব্যবসায়ীদের কাছে তারা বস্তা দরে হাওরের শামুক বিক্রি করেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, এলাকার হাঁসের খামারি ও মৎস্যখামারীদের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করে শামুক কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করা থাকে। এরপর নৌকা বোঝাই করে শামুক নৌকা ঘাটে এনে সেগুলো বস্তায় ভরা হয়। প্রতি বস্তা শামুক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। শামুক ধরায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মুজুরিও দেওয়া হয়।
মোহনগঞ্জ উপজেলার একাংশ জুড়ে বিস্তৃত ডিঙ্গাপোতা হাওর। সেখান থেকে রাতে ও ভোরে শামুক ধরা হচ্ছে। ৩নং তেতুলিয়া ইউনিয়ন এলাকায় রাস্তার মুখে বর্ষার শুরু থেকেই নৌকা দিয়ে শামুক আহরণ করে নৌকায় স্তূপাকারে রাখা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে তেতুলিয়া গ্রামে গিয়ে শামুক বাজারজাত প্রক্রিয়ার করার কাজে নিয়োজিত কয়েকজনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
নির্বিচারে শামুক ধরার বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, শামুক হাওরাঞ্চলের জলজ প্রাণির জীবনচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শামুক এভাবে আহরণ করা হলে হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হবে। শামুকের প্রজননক্ষমতাও নষ্ট হবে। অনেক শামুক আছে, যেগুলো মাছের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খায়। আবার মাছেরাও শামুক খায়। শামুক ও মাছের জীবনচক্র একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং শামুকের সংকট দেখা দিলে একসময় মাছেরও আকাল তীব্র হবে।
তিনি আরও বলেন, শামুক নিধন হলে সরাসরি মাছের ক্ষতি হয়-এ বিষয়টি মৎস্য সংরক্ষণ আইনে স্পষ্ট নয়।
বন বিভাগের নেত্রকোনা কার্যালয়ের সহকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসএফএনটিসি) আব্দুর রফিক বলেন, এটি আমাদের অধিদপ্তরের না। শামুকের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারবে পরিবেশ অধিদপ্তরে যারা আছেন তারা।
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা খাতুন বলেন, আগে আমি বিষয়টা জানি। তারপরে পদক্ষেপ নিবো।