সুমন মাহমুদ শেখ -
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অনিয়ম রোধে করনীয়
""""" সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের রাজস্ব আদায় ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি। সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে সরকারকে সহযোগিতা করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ। স্থানীয়ভাবে রাস্তা ঘাট নির্মাণ ও সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহ স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা ও অনুদান এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধগণের সরাসরি তদারকিতে বাস্তবায়ীত হওয়ার সাংবিধানিক বিধান রয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ কোন না কোন রাজনৈতিক দলের মনোনীত হওয়ায় এসব কর্মসূচিতে বরাবরই দলীয় স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে যে বা যারা এসব সহযোগিতা বা সরকারি বিভিন্ন অনুদান পাওয়ার যথাযথ যোগ্য, তারা ঠিকমতো পায় না। প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রতিনিধিগণ তাদের কাছের লোক বা দলীয় অনুসারীদের প্রাধান্য দিয়ে তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন। ফলে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় যারা সুবিধা পাওয়ার কথা তাদের বেশির ভাগ গরীব অসহায় লোকজন বঞ্চিত থেকে যায়। অথচ এসব প্রকল্প কোন দলীয় কর্মসূচি নয়, বরং এগুলো দলমত নির্বিশেষে এদেশের অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে বরাদ্দ করা হয়।
অবান্তর বিষয় হলো,
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় (বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গুভাতাসহ ভিডিজিএপ কার্ড ও অন্যান্য) বাস্তবায়ীত এসব কর্মসূচিগুলো গত প্রায় তিরিশ বছর যাবত দেখে আসছি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাশাপাশি দলীয় প্রতিনিধিগণ (উপজেলা, উইনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ) এসব কার্ড বিতরণ ও তালিকা প্রনয়ণ করে আসছে। অথচ দলীয় প্রতিনিধিদের এমন করার কোন আইনত বিধান নেই। তবে কেন দীর্ঘদিন যাবত এ অনিয়ম হয়ে আসছে? এসব মনিটরিং করা সরকারের যাথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই দীর্ঘদিন যাবত এ নিয়মটাই এখন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর ফলে, এসব সুবিধা পায় দলীয় অনুসারীরা আর প্রকৃতপক্ষে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, সরকারি কোন দান অনুদান পাওয়ার জন্যে অসহায় দরিদ্র লোকজন ছুটে যায় স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন নেতার আস্থাভাজন চামচাদের কাছে। অনেক সময় এমনটা হয় যে, এসব নেতা ও চামচারা গরীব লোকদের বলছে, তোমাকে অমুকটা তমুকটা পাইয়ে দিবো এতো টাকা লাগবে। তখন তারা এই দুর্নীতিবাজ নেতা ও চামচাদের টাকাও দেয়। অথচ এসব সরকারি দান বা অনুদান তারা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা। একদিকে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে আর্থিকভাবেও প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক!
সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
সরকারের উচিৎ এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোকে যথাযথ ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিতরণ ও তালিকা প্রনয়ণ করা। এ বিষয়ে সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুযায়ী তালিকা প্রনয়ণ করা সম্ভব। তবেই এসব কর্মসূচি দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এতে করে দুর্নীতি ও লুটপাট কমে আসবে। তবেই সরকারের এসব কর্মসূচি যথাযথভাবে সফল হবে। নতুবা যা হচ্ছে তা হলো এক ধরণের লুটপাট। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তারাই সরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা ও অনুদান ভোগ করে আসছে। আর এমনটা এদেশে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ঘটছে। এটা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার। তাই এসব বন্ধ করার আহ্বান জানাই।